শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৬

বিদায়

আজকে আমি যাচ্ছি মা-গো অনেক দূরে চলে।
আসব ফিরে সেদিন আবার,-
যেদিন তুমি বাড়িয়ে দু-হাত ডাকবে খোকা বলে।
যাচ্ছি মা-গো তোমায় ছেড়ে সাতটি সাগর পার।
আসব ফিরে সেদিন আমি,-
যেদিন তুমি খোকা বলে ডাকবে একটি বার।

ইচ্ছে ছিল মায়ের কোলো মাথা রেখে
নিশ্চিন্তের এক ঘুম ঘুমোবো।
ঘুম ভাঙলেই দেখব মায়ের চাঁদপানা মুখ।
কিন্তু এ পোড়া কপালে সইল না,-
সইল না এ হেন মাতৃ সুখ।
সময় এসেছে যেতে হবে মা-গো পথ চেয়ে আছে মোরে।
আশিস চাইতে এসেছি এবেলা দাঁড়িয়েছি তব দ্বারে।
খোলো খোলো দ্বার শুধু একবার ছুঁতে দাও শ্রী-চরণ।
তোমার চরণ স্পর্শে মা-গো ধন্য এ জীবন।
তোমারই চরণে থামে যেন মা-গো আমার এ জীবন।

শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৬

আশা নিরাশার খেলা

কাঠফাটা রোদ্দুরে চৌচির মাঠ।
রোদে জ্বলা তৃণ গুলো স্মৃতি হয়ে আছে।
ভোরের বাগানটা আজ বড় খাঁ-খাঁ করে।
নেই শালিকের কিচিমিচি কোকিলের কুহুতান।
বকম-বকম করে পায়রা ও আর গায় না।
পড়ে আছে শিথিল পাপড়ি আর শূন্য টব।
গোলাপের সাথে যেন ঝরে গেছে প্রজাপতির পাখনা।
খেজুরের গাছে ঝুলে বাবুইয়ের শূন্য কুলায়।

হঠাৎ ঈশান কোনে এক টুকরো মেঘ দেখে,-
রোদে চৌচির মাঠটি ও হেসে উঠল ক্ষণে।
ধীরে ধীরে সারা আকাশটা ভরে গেল ঘন কালো মেঘে।
অনেক গর্জাল, বর্ষার আশ্বাস জাগাল মনে।
রোদে পোড়া বাদামি ঘাস গুলো পেল সবুজের বার্তা।
একটা পলকা হাওয়ায় সব মেঘ উড়ে গেল হিমালয়ের বুকে।
_____________________সুরজিৎ সী

রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৬

স্মৃতি

ছুটন্ত ট্রেন থেকে এক পলকের ঝাপসা দেখা।
বোধহয় চিনতে ভুল করিনি!
একটুও বদলায়নি সে,
বদলায়নি তার পোশাকআসাক!
ঘন কালো চুল দিয়ে আকাশ ঢাকার প্রয়াস সারাক্ষণ।
হয়তো কেউ তার ঘন চুলের আড়ালে
নিজের আকাশে হারিয়ে গুনছে শ্রাবণ।
কিংবা দু-চোখে নিজেকেই হারিয়ে বুনছে রঙিন স্বপন।
এক পলকের এই ঝাপসা দেখায়,
আমি বুনলাম কিছু না ভোলা স্মৃতি।

_________________সুরজিৎ সী

বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৬

১৪২২

তেমন কিছু না নিয়েই
অনেক কিছু দিয়েছো!
কিছুটা নিতে পেরেছি,
কিছুটা গেছে অবহেলায়।
দিয়েছো কয়েক বিন্দু দুঃখ,
এবং দু-হাত ভরে সুখ।
না দিলেই নয়, তাই সামান্য- কান্না।
তার হাত দিয়েই পাঠিয়ে ছিলে বুকভরা হাসি।
বিনিময়ে তুমি নিয়েছো কি,-
কিছু তো নয়।
আমি তো পেয়েছি,-
সূর্যের কিরণ, চাঁদের জ্যোৎস্না।
বৈশাখী উষ্ণতায় উষ্ণ হৃদয়।
শ্রাবণের রিমঝিম ছন্দে মাতাল দুপুর।
একগুচ্ছ কাশফুলের প্রেমময় স্মৃতি।
ধানের শিসে জমে থাকা,
ঊষার আলোয় ঝকমক করা,
একটি শিশির বিন্দু।
চলার পথে পেয়েছি শাল পিয়ালির শুকনো পাতা।
রক্তিম কৃষ্ণচুড়া, লাল পলাশের প্রেমের হাতছানি।
পেয়েছি সবচেয়ে বড় কিছু, সে আমার মা,
পেয়েছি মায়ের অকৃত্রিম স্নেহ,
অফুরন্ত ভালোবাসা, অশেষ আশীর্বাদ।
১৪২২ তোমার দুহাত ভরে দেওয়া এ দান,
কখনোই ভুলব না।
____________সুরজিৎ সী

শনিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৬

হাসি

স্বপ্ন গুলো বেচে দিয়ে
তোর জন্য কিনে ছিলাম
মুঠো ভরা সুখ।
শত ভিড়ের এ দুনিয়ায়
দেখতে শুধু চেয়ে ছিলাম
তোর হাসি মুখ।
কাঁপা কাঁপা দুইটি হাতে
আজও আমি ফুটপাতে
স্বপ্ন গুলো বেচি।
তোর মুখের ঐ মিষ্টি হাসি
দেখতে বারেক দুচোখে ভরে
আজও বেঁচে আছি।
_________সুরজিৎ সী

খুকুর কান্না

মায়ের ছেঁড়া শাড়ি দিয়ে তৈরি
পুতুল খেলার ঘরটি ভেঙে গেল বলে,
সে-কি কান্না খুকুর!
কেউ সামলাতে পারেনি,-
বাবা; মা; ছোটকা; পিপি, সবাই নাজেহাল!
পাড়া সুদ্ধ লোক হাজির হল ক্ষণে।
খুকু নাহি কারো কথা শোনে।
বাবা বলল,- লক্ষ্মী মা আমার কাঁদিসনা,
তোর জন্য রাজপ্রাসাদ গড়িয়ে দেব।
ছোটকা বলল,- সোনা মেয়ে, লক্ষ্মী আমার,
মেলা থেকে রাজপুত্তুর এনে দেব।
পিপি বলল,- এই দেখ দেখ কি সুন্দর হলদে পাখি।
মা বলল,- কাঁদিস-নে মা, মুছিয়ে দুটি আঁখি।
বীরু কাকু, মালতী পিসি কোলে তুলে কত আদর করল।
খুকুর কান্না কেউই থামাতে পারেনি।
এমন সময় পুচকো ছেলেটি, নাম বিট্টু
এসে যেই বাঁশের কঞ্চির উপর
ছেড়া শাড়িটা তুলে বলল,
"আয়রে মনি রান্না খেলি"।
অমনি খুকুর কান্না বন্ধ হল।
পাড়া শুদ্ধ লোক অবাক চোখে চেয়েই থাকল।
_________________সুরজিৎ সী